লা জবাব লাদাখ – পর্ব ২

Share

লা জবাব লাদাখ – পর্ব ২

ladakh-sumitra-das-10

লা জবাব লাদাখ এর দ্বিতীয় পর্ব শুরু করলাম।যারা লা জবাব লাদাখ এর প্রথম পর্বটি পড়েননি তাদের জন্য আমার দ্বিতীয় পর্বের লেখায় একটি লিংক দিয়ে রাখলাম। লা জবাব লাদাখ পর্ব ১। মরুভূমি…এই শব্দটি শুনলে যে ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে , তা হোল ধূ ধূ প্রান্তরে যতদূর চোখ যায়, বালি আর বালিয়ারি, মাঝে মাঝে উটের সারি, কখনো বা খেজুর গাছ, কাঁটা গাছের ঝোপ, বেদুইনের দল, আর অল্প কিছু জায়গায় মরুদ্যান ৷ লাদাখের শীতল মরুভূমির নাম শুনতেই মনের মধ্যে তার এরকমই একটা ছবি এঁকে রেখেছিলাম ৷অন্যদের মুখে তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনে সেই ছবিতে তুষারাবৃত পর্বতমালা, বরফের দেয়ালের মধ্যে দিয়ে যাওয়া…ইত্যাদি যোগ হয়েছে ৷

নুব্রা উপত্যকা

লাদাখ ভ্রমণের একটি অপরূপ দ্রষ্টব্য স্থান নুব্রা উপত্যকা ৷গ্রামের নাম হুন্ডার ৷পথের সৌন্দর্য্য অবর্নণীয় ৷লাদাখের উত্তর-পূর্ব জুড়ে নুব্রার অবস্থান ৷বিশেষজ্ঞদের মতে নুব্রার আগের নাম ছিল Ldumra অর্থাৎ ফুলের উপত্যকা৷ শায়ক নদী ও নুব্রা অথবা সিয়াচেন নদী প্রবাহিত হয়ে এই বিশাল আয়তনের উপত্যকাকে লাদাখ ও কারাকোরাম পর্বতমালা থেকে পৃথক করেছে৷ শায়ক সিন্ধু নদের শাখা নদী৷সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপত্যকার উচ্চতা ১০ হাজার ফুট।

ladakh-sumitra-das-13

এই পথেই পড়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ গাড়ী চলাচল করার উপযুক্ত খারদুংলা গিরিবর্ত ৷ উচ্চতা ১৮,৩৮০ ফুট ৷ রাস্তা ভয়ঙ্কর দুর্গম ৷ বাতাসে অক্সিজেনের অভাব ৷শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঙ্গে অবশ্যই ওষুধ রাখা উচিৎ ৷ বর্ডার এরিয়া বলে লে-নুব্রা জাতীয় সড়কে বারেবারে মিলিটারী চেকিং হয় ৷ নুব্রাতে আমাদের প্রথম দ্রষ্টব্য স্থান ছিল দিসকিট গুম্ফা ৷

ladakh-sumitra-das-9

দিসকিট গুম্ফা

দিসকিট গ্রামের নামে ১৪ শতকে নির্মিত গুম্ফাটি নুব্রা উপত্যকার সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় গুম্ফা ৷অনতি দূরে ৩২ মিটার উঁচু বিশাল বুদ্ধ মূর্তি…..নাম ভবিষ্যত বুদ্ধ মৈত্রেয় ৷ এই বিশাল মূর্তিটির নীচে আমাদের সবাইকে ছোট ছোট পুতুলের মত দেখতে লাগছিল ৷ ৷অনেক নীচে শায়ক নদী বয়ে যাচ্ছে ৷শায়ক নদী লাদাখ ও পাকিস্থানের উত্তরাঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত ৷

এই অপূর্ব সুন্দর সাদা বালুকাময় নদীটি নুব্রা উপত্যকায় সব সময় আমাদের সঙ্গে ছিলো ৷ নুব্রার প্রধান আকর্ষণ এখানকার এক অবাক করা সাদা বালির মরুভূমির অবস্থান ৷ ‘শীতল মরুভূমি’ নামেই অধিক পরিচিত৷ রঙ-বেরঙের খাড়া পাহাড়, তার মাঝে বিস্তৃত এই মরুভূমির মধ্যে দিয়ে শায়কের একটি শান্ত ছোট্ট শাখা তিরতির করে বয়ে চলেছে ৷ তার ওপরে একটি ছোট্ট সাঁকো ৷ আহা কী অপরূপ দৃশ্য !!! ঠিক যেন কোন শিল্পী মস্ত বড় এক ক্যানভাসের ওপর রং তুলি দিয়ে পরম যত্নে ছবি এঁকে রেখেছে ৷

ব্যাকট্টিয়ান উট

ladakh-sumitra-das-3

চারিদিকে দুই কুঁজওয়ালা ব্যাকট্টিয়ান উট রাজকীয় চালে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷এদের আদি বাড়ি মধ্য এশিয়া ৷ এই প্রাণীটি প্রচন্ড গরম , ঠান্ডা , জলের অভা্ব সহ্য করতে পারে অনায়াসে ৷ এই কারণে সিল্ক রূটের দুর্গম রাস্তায় ব্যবসায়ীরা এদের পিঠে মাল নিয়ে যাতায়াত করতো ৷ তাদেরই কিছু সংখ্যক উট নুব্রা উপত্যকায় থেকে গেছে ৷ …এদের পিঠে চড়ে ক্যামেল সওয়ারী করার মজাই আলাদা ৷

এই মোহময় পরিবেশ দেখতে দেখতে সূর্য্যদেব কখন যে বরফের মুকুট পরা পর্বতমালার মাঝখান দিয়ে পাটে বসেছে, খেয়ালই করি নি ৷ শুধু সেই গোধূলির কনে দেখা আলোয় মনে হোল সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মান্ড রঙের খেলায় মেতেছে ৷ সেই তিরতিরে নদীটি, সেই রূপোলী বালুকা বেলা, দূরের কারাকোরাম পর্বতমালা ……কাকে ছেড়ে কাকে দেখি !!! সেই বিমুগ্ধ বিমূঢ় মনের অবস্থায় গাড়ীতে এসে বসতে হোল ৷ যতক্ষণ পারলাম সেই অপরূপ শোভা দু’চোখ ভরে দেখতে থাকলাম ৷

ladakh-sumitra-das-8

লাদাখ প্রতিদিন নব নব রূপে আমাদের চোখে ধরা দিয়েছে ৷এত দূর্গম অন্তবিহীন পথ পেরিয়ে এসে নীরবতার যে অনাবিল সৌন্দর্য্য প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছি……তা’ সারা জীবনের পাথেয় হয়ে রইল ৷

sumitra das author
শ্রীমতি সুমিত্রা দাস

শ্রীমতি সুমিত্রা দাস
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা নিরিবিলি পাহাড়ী শহর দার্জিলিঙে বড় হয়ে ওঠা৷ শুধু শহর দার্জিলিঙ নয় ,কার্শিয়াং,টুং,মার্গারেট’স হোপ চা-বাগানের মত ছোট ছোট পাহাড়ী নিঃস্বর্গভূমির অপরূপ পরিবেশের মধ্যে জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে ৷ তাই প্রকৃতিকে তাঁর দ্বিতীয় মা মনে করেন ৷আকাশচুম্বী পাইন, দেবদারু,শ্যাওলা জড়ানো ধূপি গাছের সারি,নাম-না-জানা চঞ্চলা কিশোরী ঝর্ণা ,ছোট বড় জলপ্রপাতের আছড়ে পড়ার গা ছমছমে আওয়াজ ,পাহাড়ের কোলে অনামী ফুলের সমারোহ,ঝকঝকে রূপালী চাদর মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা ,লাল লাল গালের ফুটফুটে নেপালী ছেলেমেয়ে ….এরা সবাই ছিল তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ৷ফটোগ্রাফীর সাথে তাঁর অনেক পুরোন প্রেম ৷ বাবা ছিলেন খুব ভাল চিত্রশিল্পী ও আলোকচিত্রশিল্পী ৷সেখান থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৷

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা জায়গায় বারবার ছুটে যাওয়া আর প্রকৃতিকে নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে মন উতলা হয়৷ এভাবেই ২০১৬ সালে  অনন্য সৌন্দর্য্যের লাদাখের হাতছানিতে ছুটে যাওয়া ,তার ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য্যে বাকরুদ্ধ হওয়া ৷
এছাড়া জীবনকে যারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ,সেইসব মানুষের পাশে থেকে হাত ধরতে ভাল লাগে ৷ পৃথিবীর আলো যাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ,অন্তরের আলো জ্বেলে  যারা আলোময় করে তুলছে নিজেদের জীবন,সেইসব ছেলেমেয়েদের  জন্য তৈরী অডিও লাইব্রেরীতে তাদের প্রয়োজনীয় বই পাঠ করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ৷ সুমিত্রার কাছে এ’ এক পরম প্রাপ্তি ৷

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *