লা জবাব লাদাখ

Share
ladakh9-sumitra-das

লা জবাব লাদাখ (পর্ব ১)
 
মরুভূমি’ …এই শব্দটি শুনলেই যে ছবি চোখর সামনে ভেসে ওঠে , তাহলো ধু-ধূ প্রান্তরে যতদূর চোখ যায় , বালি আর বালিয়ারি…মাঝে মাঝে উটের সারি নিয়ে লোক চলেছে , কখনো খেজুর গাছ ,কখনো কাঁটা গাছের ঝোপ , বেদুইনের দল , আর অল্প কিছু জায়গা জুড়ে মরুদ্যান ৷ শীতল মরুভূমি’ লাদাখের নাম শুনতেই মনের মধ্যে তার একটা ছবি এঁকে রেখেছিলাম ৷

on-the-way-ladakh-sumitra-das
Ladakh – On the way Picture taken by Smt. Sumitra Das

অন্যদের মুখে তাদের অভিজ্ঞতা শুনে সেই ছবিতে তুষারাবৃত পর্বতমালা , বরফের দেয়ালের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ী রাস্তা অতিক্রম করা…ইত্যাদি যোগ হয়েছে ৷

মরুপাহাড়ের দেশ লাদাখ মালভূমি

কত অজানারে জানার আকুলতায় বারে বারে মন ছুটে চলে প্রকৃতির এ’ প্রান্ত থেকে ও’ প্রান্তে ৷ এবারে আমাদের লক্ষ্য ছিলো জম্মু ও কাশ্মীরের অন্তর্গত মরুপাহাড়ের দেশ লাদাখ মালভূমি ৷ তিব্বতী ভাষায় ‘লা’ শব্দের অর্থ ‘গিরিবর্ত’ আর ‘দাখ’ শব্দের অর্থ ‘অনেক’ ৷ তাই লাদাখকে বলা হয় ‘ Lord of several passes ‘.

ladakh14-sumitra-das

আমাদের যাত্রাপথ ছিলো মানালী থেকে লে ৷ এই ভয়ঙ্কর রুক্ষ দুর্গম পথ, যার বাঁকে বাঁকে রোমাঞ্চ মিশ্রিত ভয় লুকিয়ে আছে– এই পথে লাদাখ না গেলে প্রকৃতির এক অনাবিল সৌন্দর্য্য থেকে চিরদিন বঞ্চিত থাকতাম ৷

ladakh11-sumitra-das
ladakh10-sumitra-das

যাত্রাপথ

মানালী থেকে লে-র দূরত্ব ৪৭৭ কিমি ৷ এই পথে পাঁচটি সুউচ্চ গিরিবর্ত ( পাস) পেরোতে হয় যার মধ্যে সর্বনিম্ন উচ্চতার রোটাং পাস (১৩,০৫৮ ফুট) , আর সর্বোচ্চ তাংলাংলা (১৭,৫৮২ ফুট) ৷

ladakh4-sumitra-das

রোটাং পাসের পর চন্দ্র নদী পেরিয়ে কেলং শহর ৷ পথে থোকসার , শিশু আর তান্ডি গ্রাম ৷ পুরো যাত্রাপথ প্রাকৃতিক শোভায় ভরপুর ৷ কেলং পেরিয়ে বরিলাচালাপাস (১৬,০৪০ ফুট)৷

ladakh6-sumitra-das
on-the-way-ladakh-1-sumitra-das
Ladakh – On the way Picture taken by Smt. Sumitra Das

মানালী থেকে লে যাত্রাপথে অনেকে কেলং এ রাত্রিবাস করেন ৷ কিন্তু আমরা আরেকটু এগিয়ে সারচুতে রাত কাটালাম ৷ এখানে ঘরের সব রকম সুবিধাযুক্ত তাঁবুতে থাকতে হয় ৷ এটিও দারুণ অভিজ্ঞতা ৷

ladakh5-sumitra-das

চারিদিকে বরফে মোড়া পাহাড়ের মাঝখানে সারচু উপত্যকা একটি সৌন্দর্য্যের খনি ৷ বিশেষতঃ রাতের সারচুর অধরা রূপ বর্ণনাতীত ৷ প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য যাত্রীদের তৈরী হয়ে আসতে হয় ৷

ladakh1-sumitra-das

রঙের পাহাড়

পরদিন খুব ভোরে সারচু থেকে বেরিয়ে কাংলাজালের অপূর্ব পাথুরে স্থাপত্য দেখতে দেখতে আমাদের গাড়ী এগিয়ে চললো ৷ এবার এক অপার বিস্ময় অপেক্ষা করছিলো আমাদের জন্য ৷ যত এগোতে লাগলাম , পাহাড়ের সবুজ বনানী কমে আসতে লাগলো ৷ কিন্তু এ কী !!! এতো রঙের পাহাড় !!! সেই সবুজতাবিহীন পাহাড়ের সৌন্দর্য্য বর্ণানাতীত ৷ পাহাড় যে এতো বর্ণময় হতে পারে,কোনদিন কল্পনাও করতে পারি নি ৷

ladakh13-sumitra-das

হিমালয়ের বিপরীত দৃশ্যপট

আমরা ইতিমধ্যে নাকিলা পাস (১৬,২০০ ফুট) , লাচুংলা পাস(১৬০০০ ফুট) পেরিয়ে এসেছি ৷ এই ফাঁকে বলে রাখি…আমাদের দেশে একমাত্র লাদাখেই হিমালয়কে বিপরীত দিক থেকে দেখা যায় ৷ আমাদের এই যাত্রাপথে সর্বশেষ পাস তাংলাংলা পাস (১৭,৫৮২ ফুট) ৷ উপসিতে সিন্ধু নদের সঙ্গে আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ ৷

ladakh30-sumitra-das

সিন্ধু নদ

আরেক বার রোমাঞ্চিত হবার পালা ৷সিন্ধু নদকে তো আমরা কবে থেকে চিনি! ইতিহাস বই এর পাতায় পাতায় তার নাম ৷ কত প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে সে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ৷ কত শত সভ্যতার উথ্থান পতনের সাক্ষী হয়ে সে আজো বয়ে চলেছে ৷

ladakh8-sumitra-das

সিন্ধু নদের পাড় ধরে আমরা পৌঁছে গেলাম লে শহরে ৷ তখন সূর্য্য সদ্য অস্তাচলে ৷ গোধূলির রাঙা আলোয় সজ্জিতা অপরূপা লে শহরের ঊষ্ণ অভ্যর্থনায় আমরা মোহিত হয়ে গেলাম ৷

ladakh17-sumitra-das

আজ এই পর্য্যন্ত…দেখা হচ্ছে খুব শীঘ্রই দ্বিতীয় পর্বে। ৷৷

sumitra das author
শ্রীমতি সুমিত্রা দাস

শ্রীমতি সুমিত্রা দাস
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা নিরিবিলি পাহাড়ী শহর দার্জিলিঙে বড় হয়ে ওঠা৷ শুধু শহর দার্জিলিঙ নয় ,কার্শিয়াং,টুং,মার্গারেট’স হোপ চা-বাগানের মত ছোট ছোট পাহাড়ী নিঃস্বর্গভূমির অপরূপ পরিবেশের মধ্যে জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে ৷ তাই প্রকৃতিকে তাঁর দ্বিতীয় মা মনে করেন ৷আকাশচুম্বী পাইন, দেবদারু,শ্যাওলা জড়ানো ধূপি গাছের সারি,নাম-না-জানা চঞ্চলা কিশোরী ঝর্ণা ,ছোট বড় জলপ্রপাতের আছড়ে পড়ার গা ছমছমে আওয়াজ ,পাহাড়ের কোলে অনামী ফুলের সমারোহ,ঝকঝকে রূপালী চাদর মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা ,লাল লাল গালের ফুটফুটে নেপালী ছেলেমেয়ে ….এরা সবাই ছিল তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ৷ফটোগ্রাফীর সাথে তাঁর অনেক পুরোন প্রেম ৷ বাবা ছিলেন খুব ভাল চিত্রশিল্পী ও আলোকচিত্রশিল্পী ৷সেখান থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৷

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা জায়গায় বারবার ছুটে যাওয়া আর প্রকৃতিকে নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে মন উতলা হয়৷ এভাবেই ২০১৬ সালে  অনন্য সৌন্দর্য্যের লাদাখের হাতছানিতে ছুটে যাওয়া ,তার ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য্যে বাকরুদ্ধ হওয়া ৷
এছাড়া জীবনকে যারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ,সেইসব মানুষের পাশে থেকে হাত ধরতে ভাল লাগে ৷ পৃথিবীর আলো যাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ,অন্তরের আলো জ্বেলে  যারা আলোময় করে তুলছে নিজেদের জীবন,সেইসব ছেলেমেয়েদের  জন্য তৈরী অডিও লাইব্রেরীতে তাদের প্রয়োজনীয় বই পাঠ করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ৷ সুমিত্রার কাছে এ’ এক পরম প্রাপ্তি ৷

2 Comments

  1. Samanjana Roychowdhury says:

    ki valo lekha ti.

  2. Anjan jana says:

    ditiyo prober apekhay roilam.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *